IQNA

সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শিশু হুমকি মুখে: ইউনিসেফ

23:41 - February 23, 2018
সংবাদ: 2605118
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসরত সাত লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফের বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেডার।



বার্তা সংস্থা ইকনা: শুক্রবার বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাম্প্রতিক ঢল শুরুর ছয় মাসপূর্তিতে জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ইউনিসেফের বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেডার। জাতিসংঘের শিশু ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের জরুরি কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন এব্যাপারে বিস্তারিত জানান সংবাদমাধ্যমকে।

এডুয়ার্ড বলেন, এরমধ্যে বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর আশ্রয় শিবিরগুলোতে বাস করছে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার এবং সহিংসপূর্ণ রাখাইন রাজ্য রয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।

প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে প্লাবিত হতে পারে। আর তেমনটা হলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাবে। এতে ক্লিনিক, শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুদের জন্য চালু করা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রয়ে গেছে। যারা সহিংসতার ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণেই তাদের অনেক আত্মীয় ও প্রতিবেশী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু রয়েছে। যারা গত বছর ও তার আগে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা-স্রোতের সঙ্গে চলে আসে।

জাতিসংঘের শিশু ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের জরুরি কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, ‘প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মূলত আটকে পড়েছে! হয় তারা সহিংসতার মধ্যেই মিয়ানমারের ভেতরে বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে অথবা দেশে ফিরতে না পারার কারণে বাংলাদেশের জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে অসহায়ের মতো ঘুরছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটা এমন এক সংকট, যার কোনো তড়িৎ সমাধান নেই এবং এই সংকট নিরসনে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে, যদি এ সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা না নেওয়া হয়।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিজেদের ঘর-বাড়ি ও কমিউনিটি থেকে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গারা এখন ভাসমান সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হওয়া এই মানুষগুলো তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তা শরণার্থীদের জন্য মিয়ানমারে তাদের আগের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা, নাগরিকত্ব, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সুযোগসহ একটি সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ম্যানুয়েল ফন্টেইন।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের অনেক অংশে প্রবেশাধিকার না থাকায় ইউনিসেফ ও অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

ইউনিসেফ বলছে, অবিলম্বে এবং নির্বিঘ্নে এই সব শিশুর পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া দরকার। একইসঙ্গে আন্তঃসাম্প্রদায়িক উদ্বেগ চিহ্নিত করতে এবং সামাজিক সহাবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাও অপরিহার্য।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারের নেতৃত্বে ও নজরদারিতে সহায়তা প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিপর্যয় এড়ানো গেছে, যেখানে ৭৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে স্থানীয় কমিউনিটি। পানির কূপ খনন, কয়েক হাজার ল্যাট্রিন স্থাপন এবং শিশুদের কলেরা, হাম ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় সহায়তা প্রদানে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হয়েছে ইউনিসেফ।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ, খুবই সীমিত আকারের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ এবং মানবিক সহায়তার ওপর তাদের ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে রাখাইনে সহিসংতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

এডুয়ার্ড আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে ঝড় বৃষ্টিতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করবে। প্রতিবেদনে রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে, স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আরটিএনএন

captcha