IQNA

মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরবে কি?

0:02 - February 16, 2021
সংবাদ: 2612257
তেহরান (ইকনা): ১৫ দিন অতিবাহিত, সামরিক শাসনে ফিরে গেল মিয়ানমার। গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে স্টেট কাউন্সিলর সু চিসহ আইন প্রণেতাদের গৃহবন্দি করে ক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওইদিন থেকেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় আপামর জনতা।

দিন গড়ানোর সঙ্গে রাজপথে সাধারণ মানুষের ভিড় যতটা বেড়েছে, ততটাই কঠোর অবস্থানে গেছে জান্তা সরকার। রাজধানী নেইপিদো, ইয়াঙ্গুন ছাড়াও ছোট ছোট শহরেও রাজপথ দখলে নিয়েছে জান্তা সরকারবিরোধীরা। সামরিক বাহিনীর হুমকি ধামকিতে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না আন্দোলনকারীরা। উল্টো সু চির মুক্তি ও দ্রুত ক্ষমতা ছাড়তে প্রকাশ্যে আল্টিমেটাম দিয়ে আসছে ক্ষুব্ধ জনতা, মানছে না কারফিউ ও জরুরি সতর্কতাও।

এর মধ্যেই নতুন করে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য সতর্কবার্তা দিয়ে দেশটির বর্তমান সরকার প্রধান জানিয়েছে, রাজপথে টহল দেয়া সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের কাজে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। এমনকি বর্তমান সরকারবিরোধী কোন কাজ যুক্ত থাকলে দীর্ঘমেয়াদি শাস্তি ও জরিমানার মুখোমুখি হবার কথা জানিয়ে নতুন আইন চালু করেছে সামরিক সরকার।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, যারাই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তব্য পালনে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে তারা সাত বছরের কারাদণ্ডের মুখে পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, যারা জনগণকে ভয় কিংবা বিক্ষোভে উস্কানি ছড়াবে তারা তিন বছরের কারাদণ্ডের মুখে পড়তে পারে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৮৮ সালের বিভিন্ন চিত্র মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতাকামী আন্দোলন দমন করতে সেনাবাহিনী সেসময় যে দমন-পীড়ন চালিয়েছিল তাতে রাজপথ রক্তে ভেসে গিয়েছিল। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। এখনো সাধারণ মানুষের বিক্ষোভে তেমনভাবে রক্তপাতের দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়নি। দিন দিন সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়নের মাত্রা বাড়ানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের তোপের মুখে জান্তা সরকার। নতুন করে এই আইন জারি করায় সামনে হয়তো নতুন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হতে পারে।

গন্ত্রতান্ত্রিক সরকার উচ্ছেদ করে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় বসায় এমনিতেই নানা নিষেধাজ্ঞার কবলে মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, এ তালিকায় আছে দেশটির বড় বড় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞার কবলে দেশটির সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইং। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে নতুন করে মিয়ানমারে আর বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে না তারা।

চাপের মুখে থাকার জান্তা সরকার নতুন নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরেরও ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক সরকার সেনা সমর্থিত দল কিনা তা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সামরিক সরকারের অনুগত হলে, সু চিসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা কবে মুক্তি পাবে বা আদৌ পাবে কিনা তা স্পষ্ট করেনি জান্তা সরকার। সেনাবাহিনী মাত্র একবছর পরই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কিনা তা নিয়েও ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনী সু চির দল এনএলডি'র জয়কে পাত্তা দেয়নি এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে প্রায় দুই দশক সময় লাগিয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের বিস্ফোরণ যেমন ঘটছে, অন্যদিকে বৈশ্বিক চাপের মুখে জান্তা সরকার সামনে কী নতুন ছক কষছে তা এখন দেখার বিষয়। এমটি নিউট

captcha