বার্তা সংস্থা ইকনা: ২৪ বছর বয়সী হাদিয়া জানিয়েছেন, সমগ্র বিতর্কের একমাত্র কারণ তার ইসলাম গ্রহণ।
হাদিয়া তামিলনাড়ুর সালেমের কলেজ হোস্টেলে কলেজ প্রিন্সিপালের অভিভাবকত্বে বাস করছেন। চলতি সপ্তাহে হাদিয়া তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে কেরালার কোজিকোডে এসেছেন।
কেরালার কোজিকোডে হাদিয়া এবং শেফিন জাহান শনিবার ভারতের জনপ্রিয় ‘ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই)’ অফিসে যান।
সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাদিয়া বলেন, ‘ভারতীয় সংবিধান সকল নাগরিককে তাদের ধর্ম বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে, যা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং আমাকে নিয়ে যা কিছু ঘটেছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে-আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।’
হাদিয়া বলেন, ‘আমাদের দুঃসময়ে একমাত্র পিএফআই’ই আমাদের সমর্থন করেছিল এবং আরো আশ্চর্যজনক হল যে, আমরা দুটি মুসলিম সংগঠনের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের সাহায্য করতে অস্বীকার করেছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আমাদের বিয়েকে সমর্থন করায় আমরা মনে করি আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি।’
কলেজে ফিরে যাওয়ার তিনি কেরালায় তিন দিন অবস্থান করবেন।
গত বছরের মে মাসে কেরালার হাই কোর্ট হাদিয়া ও শেফিনের বিবাহ বাতিল করে দেয়। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশ খারিজ করে দেন।
দেশটির প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, ‘আইন অনুযায়ী, হাদিয়া ও তার স্বামী শাফিন জাহানের দাম্পত্য বৈধ। তারা এক সঙ্গে থাকতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন অবশ্য এও জানিয়েছে, ওই মামলায় কোনো অপরাধের যে তদন্ত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), প্রয়োজন হলে তা তারা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে হাদিয়া-শাফিনের বিয়ে সম্পূর্ণ বৈধ।
হাদিয়া জন্ম হয় কেরলের একটি হিন্দু পরিবারে। তার নাম ছিল আখিলা অশোকান। শাফিনের সঙ্গে বিয়ের কয়েক মাস আগে হাদিয়া মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নাম হয় হাদিয়া। এর পরেই হাদিয়ার বাবা কেরালা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন।
তার অভিযোগ ছিল, এটা ‘লাভ জিহাদ’-এর ঘটনা। ধর্মান্তরণ করে হাদিয়াকে বাধ্য করা হয়েছিল শাফিনকে বিয়ে করতে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কেরল হাইকোর্ট হাদিয়ার বিয়ে বাতিল করে দেয়। কেরালা হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যান হাদিয়ার স্বামী শাফিন।
গত বছরের ১০ জুলাই আখিলা তার কাসারাগদ জেলার উদুমার বাড়ি ত্যাগ করেন। বাড়ি ত্যাগ করার আগে তিনি ১৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে যান। এতে তিনি তার অভিজ্ঞতা ও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
বাড়ি ছাড়ার পর তিনি তার মামার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাকে জানান যে, তিনি তার বাড়িতে শান্তি খুঁজে পেতে সমর্থ হন নি।
কানুর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর তিনি এশিয়ানেট নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছেতেই ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন এবং কেউ তাকে এ জন্য বাধ্য করেনি।
পেশায় একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আখিলা বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অনেক কাল্পনিক অভিযোগ ছড়ানো হয়েছিল যে, আমি ইসলামিক স্টেটে যোগদান করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ি ছাড়ার সময় আমি আমার পাসপোর্টও সঙ্গে নেইনি। আইএসের সঙ্গে আমাকে জড়ানোর কারণে আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংযোগ নেই।’ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস