IQNA

সর্বজনীনতাবাদী মার্কিন নারী হেলেগার্সের ইসলাম গ্রহণের মর্মস্পর্শী কাহিনী

1:26 - October 24, 2018
সংবাদ: 2607091
‘আমি এভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করি যে, আমার এই ভ্রমণ সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল যেদিন আমার জীবন শুরু হয়েছিল এবং এটি চলমান থাকবে। আমি এমন চিন্তা করতে অভ্যস্ত যে, আমি মুসলিম হওয়ার পর থেকে আমার আধ্যাত্মিক ভ্রমণের শুরু হয়েছিল।

 বার্তা সংস্থা ইকনা: আমি মনে করি, আমার এই ভ্রমণ শুরু হয়েছিল তখন থেকে যখন আমি আমার শিশুকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মের প্রতি আগ্রহ অনুভব করতে থাকি। আমি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস শহরে আমার পিতামাতার সাথে সর্বজনীনতাবাদ নামক মতবাদে বিশ্বাসী হিসেবে বেড়ে উঠছিলাম। (সর্বজনীনতাবাদ বা বৈশ্বিকতাবাদ হল- বৈশ্বিক বা সার্বজনীন প্রয়োগ বা প্রযোজ্যতা-যুক্ত একটি ধর্মীয়, ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিক মতবাদ।)

আমার পিতামাতা আমাকে সবসময় বলতেন যে, আমাকে একটি বিষয়ে বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু কি বিশ্বাস করতে হবে বা কার আরাধনা বা ইবাদত করতে হবে তারা তা আমাকে কখনোই বলেন নি। তারা এমনকি আমাকে বিশ্বে প্রচলিত সকল ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।

সর্বজনীনতাবাদে বিশ্বাসী একজন হিসেবে আপনি খ্রিস্টানদের চার্চ, গির্জা বা অন্য যে কোনো ধর্মের উপাসনালয়ে যেতে পারেন কিন্তু আমি একজন শিশু হিসেবে সবসময় মসজিদে যেতাম। আর এটিই ছিল প্রথম বারের মত একটি বিষয় যখন আমি ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ অনুভব করতে থাকি।

আমার প্রথম ভ্রমণ করা মসজিদটির সৌন্দর্য দেখে আমি যারপর নাই বিস্মিত হই। এটি ছিল ম্যাসাচুসেটস শহরের একটি মসজিদ। আমি কলজে অধ্যয়ন করার সময় ইসলাম সম্পর্কে কিছু পড়ালেখা করেছিলাম এবং আমি পুনরায় ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিই।

আমি আসলে এটিকে আমার ধর্ম হিসেবে মনে করতাম না কিন্তু আমি চিন্তা করতাম, ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কিছু একটায় বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা তাদের জন্য সবসময় উপস্থিত এবং তারা এই বিশ্বাসের শক্তি অনুভব করতে পারে।’ আর এর পরেই আমি মনে করেছিলাম যে, এই ধর্মের মধ্যে অবশ্যই আগ্রহ দেখানোর মত কিছু না কিছু রয়েছে।

কিন্তু এটি ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মনে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারে নি যতক্ষণ অবধি না আমি আমার নিজেকে ক্ষুদ্র অনুভব করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি আসলে আমার হাঁটু গেঁড়ে বসেছিলাম, আমার মাথাকে মেঝেতে স্পর্শ করালাম এবং আমি বলেছিলাম- ‘প্রিয় সৃষ্টিকর্তা, আমাকে পথ প্রদর্শন করুন।’

এর পরে আমি আয়নায় আমার নিজেকে দেখলাম আর অনুভব করলাম- ‘আমি আর এরকম থাকতে চাই না। আমি একজন ভালো মানুষ হতে চাই।’

আর এর পরে আমি আমার একজন মুসলিম বন্ধুর নিকটে যাই। ‘আমাকে ইসলাম ধর্মের বিষয়ে পথ প্রদর্শনের জন্য আমি তাকে বলি নি’, কিন্তু আমি বলেছিলাম- ‘আমার সাহায্য দরকার, আমার আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শক প্রয়োজন। তুমি কি তোমার ধর্ম সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতে পার?’

আর আমার মুসলিম বন্ধুটি আমাকে আসলে তার একজন খ্রিস্টান বন্ধুর কাছে নিয়ে গেল। আর সে বলল- ‘এই মেয়েটি আসলেই একটি মিষ্টি মেয়ে। সকলেই তাকে ভালোবাসে, আমি আশা করি তুমি তার কাছ থেকে কিছু শিখতে পারবে।’

সুতরাং আমি সেই মেয়েটির সাথে পরিচিত হলাম। যখন তার সাথে আমার পরিচয় পর্ব শেষ হল আমি তাকে বললাম- ‘আপনি তো জানেনই আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু শুনতে চাচ্ছি।’

পরবর্তীতে আমার মুসলিম বন্ধুটি আমাকে ইসলাম সম্পর্কিত কিছু ভিডিও দেখতে দিয়েছিল। আমি সে সমস্ত ভিডিও’র বক্তার মুখমণ্ডলে আলো দেখতে পেয়েছিলাম এবং সেটিই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল।

আর যখন আমি একজন মুসলিম নারী হয়ে যাই এর পর থেকে ইসলাম আমার রাত এবং দিন হয়ে যায়। আমি ভিডিও’র বক্তার মুখে কবর সম্পর্কে শুনে এর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহী হয়ে যাই।

আমি এ আসক্ত হয়ে যাই যে, সবসময় কবরের কথা আমার মনে আসতে থাকে এবং এটি আমার জীবনে পরিণত হয়ে যায়। আমি মুসলিম হওয়ার পরেই বুঝতে পারলাম যে, আমরা যেভাবে এই বিশ্বকে দেখি আসলে তা এরকম নয়।

একজন মুসলিম বিবাহিত নারী হিসেবে আমি আমার অধিকার সম্পর্কে অবগত আছি। আমি মনে করি একজন মুসলিম হিসেবে আমার আরো অনেক কিছু করার আছে। আমাকে আরো অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।

আমি গৃহিনীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। আমি সেসব নারীর বিরুদ্ধেও কিছু বলতে চাই না যারা গৃহে অবস্থান করতে ভালোবাসেন এবং তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করার মাধ্যমে তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে চায়।

কিন্তু আমি আমার অবস্থান অনুযায়ী আমার নিজেকে চিনি। আর যদি আমি কখনো সন্তানের মা হতে পারি, ইনশাল্লাহ আমি বাহিরে কাজ করে যাবো। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী কিছু করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

আমি বেশ কিছু কারণেই গৃহের বাহিরে আমার কর্মক্ষেত্রে কাজ করে যাব এবং একই সাথে আমার সন্তানদেরকে শিক্ষিত করতে চেষ্টা করবো। আমি এর সব কিছুই করতে চাই এবং আমি মনে করি বর্তমান সময়ে এটিই যথোপযুক্ত।

আমি আমার মাকে দেখেছি। তিনি সবসময় একজন শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন। তিনি আমাদের জন্য একটি সুখকর জীবন বয়ে আনার জন্য শিক্ষকতা ছাড়াও আরো অনেক ধরনের কাজ করেছিলেন। এতসব কিছুর পরেও তিনি প্রতি রাতে আমাদের জন্য রান্না করতেন।

তিনি সবসময় আমার পাশে ছিলেন। তিনি ছিলেন এমন একজন নারী যেমনটি মধ্যবিত্তের নারীরা হয়ে থাকেন। তার পরিবারের সকলের জন্য তিনি ছিলেন সবকিছুর পরিপূরক।

সূত্রঃ কিয়েরস্টিন হেলেগার্স, যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মান্তরিত মুসলিম নারী যিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সর্বজনীনতাবাদ নামে মতবাদে বিশ্বাস করতেন। ইসলাম গ্রহণের পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী সমাজের একজন মুসলিম নারী হিসেবে তিনি তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অনুভূতি জানানোর জন্য উপরোক্ত কলামটি লিখেছেন।

captcha