IQNA

পরমাণু অস্ত্র বৃদ্ধির ঝুঁকিতে বিশ্ব

14:58 - June 13, 2022
সংবাদ: 3471980
তেহরান (ইকনা): পরমাণু অস্ত্রধারী দেশের সংখ্যা তো বেড়েছেই, সেই সঙ্গে সাড়ে তিন দশকের ব্যবধানে আবার বেড়েছে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও বৃদ্ধির আশঙ্কা।
সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সোমবার এমনই আভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ধারা আগামী দশকে অব্যাহত না-ও থাকতে পারে।
 
প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা জানান, বিশ্বব্যাপী বিগত ৩৫ বছর ধরে কমতে থাকা পরমাণু বোমার সংখ্যা আগামী দশকে বাড়তে পারে।
 
এ বছরের শুরুতেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল, ‘পরমাণু অস্ত্রের যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না এবং তা কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়। ' এ পাঁচ দেশের সবাই পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী। এ কাতারে সর্বশেষ যোগ দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।  
 
এসআইপিআরআই জানায়, এ বছরের শুরু পর্যন্ত পরমাণু শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল (অস্বীকৃত) ও উত্তর কোরিয়ার সম্মিলিত পরমাণু বোমার সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭০৫টি। গত বছরের গোড়ার দিকে বোমার সংখ্যা আরো ৩৭৫টি কম ছিল। উল্লেখ্য, গোটা বিশ্বের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে।
 
বর্তমানে রাশিয়ার কাছে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৯৭৭টি পরমাণু বোমা রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৮০টি কম। ধারণা করা হচ্ছে, এসব পরমাণু বোমার মধ্যে বর্তমানে তাক করা আছে এক হাজার ৬০০টি।
 
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৮টি পরমাণু বোমার, যা গত বছরের তুলনায় ১২০টি কম। তবে মোতায়েন থাকা বোমার সংখ্যা রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি। সংখ্যাটি এক হাজার ৭৫০।  
 
স্নায়ুযুদ্ধের শেষ দিকে, ১৯৮৬ সালে বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোর কাছে পরমাণু বোমার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়ার পূর্বসূরী) অস্ত্রভাণ্ডার হ্রাসের পদক্ষেপ নিলে বিশ্বের বিপজ্জনক এই অস্ত্রের মজুদ ধারাবাহিকভাবে কমে আসে।  
 
এসআইপিআরআইয়ের গবেষকরা আরো বলেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের যুগ একটি জায়গায় এসে শেষ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
 
এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রের সহলেখক ম্যাট কোরদা বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধ শেষের পর আমরা শিগগিরই সেই জায়গায় যাচ্ছি, যেখানে পরমাণু অসে্ত্রর বৈশ্বিক সংখ্যা প্রথমবারের মতো বাড়তে যাচ্ছে। ' তিনি জানান, আগামী বছরগুলোয় নিরস্ত্রীকরণের প্রচষ্টো খুবই কঠিন হয়ে যাবে।
 
ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েকবার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এ অবস্থায় অন্যরা পরমাণু প্রযুক্তির আধুনিকায়ন কিংবা ভাণ্ডার বাড়িয়ে নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন সংস্থার গবেষকরা।  
 
২০২১ সালে জাতিসংঘ পরমাণু অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চুক্তি এবং পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির মেয়াদ বাড়লেও বেশ কয়েক বছর ধরে নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি এবং পরমাণু অস্ত্রধর দেশগুলোর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিযোগিতাও দৃশ্যমান। সূত্র : এএফপি
captcha